নোট বাতিলে ভারত সরকারের ‘ঐতিহাসিক সাফল্যে’ ক্ষতিগ্রস্ত যৌনকর্মীদের ঊষা
নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে ‘ঐতিহাসিক সাফল্যে’র বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ১২৫ কোটি ভারতবাসী বিজয়ী বলেও প্রচার করা হচ্ছে ওই বিজ্ঞাপনে৷ অথচ, এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যৌনকর্মীদের ব্যাংক ঊষা৷
যৌনকর্মীদের জন্য এবং যৌনকর্মীদের পরিচালিত সোনাগাছির সমবায় ব্যাংক ঊষা অর্থাৎ, ঊষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের যাত্রা ১৯৯৫-তে শুরু হয়েছিল৷ মাত্র ১৫ টাকা দিয়ে এই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন যে কোনও যৌনকর্মী৷ এ দিকে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ২০১৩-তে এই ব্যাংকের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছিল পাঁচ কোটি টাকা৷
আর, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের অডিট অনুযায়ী ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের অংক ৩০ কোটি টাকার উপর বলে জানিয়েছেন এই ব্যাংকের ম্যানেজার শান্তনু চট্টোপাধ্যায়৷ এবং, এই ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা এখন ৩০,৭৭২৷ অথচ, ২০১৬-র আট নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন এই ব্যাংকের গ্রাহকরা৷ তবে, শুধুমাত্র ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টিও নয়৷ নোট বাতিলের পর থেকে এই ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরিমাণও অনেক কমে গিয়েছে৷
কারণ, নোট বাতিলের জন্য নগদ টাকার যোগানে যে প্রভাব পড়েছে, তার জেরে যৌনকর্মীদের উপার্জনও কমে গিয়েছে৷ এবং, এই ধরনের পরিস্থিতির বদল কিছুটা ঘটলেও, সমস্যা এখনও রয়েছে৷ আর, এ সব কারণে নোট বাতিলের প্রভাবে যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ব্যাংক, সেই বিষয়টি ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের অডিটে প্রকাশ পেতে চলেছে বলে জানিয়েছেন এই ব্যাংক এবং দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা৷ তবে, সমস্যার শেষ এখানেও নয়৷ কারণ, নোট বাতিলের জেরে সোনাগাছির এই ব্যাংক সম্পর্কে যৌনকর্মীদের বিভিন্ন অংশে আতঙ্কের জন্ম হয়েছে৷ নোট বাতিলের কয়েকদিন পরে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সমবায় ব্যাংক থেকে টাকা বদলের সুযোগ হারিয়েছিলেন গ্রাহকরা৷
আর, ওই ঘোষণার কারণেই ঊষা সম্পর্কে যৌনকর্মীদের বিভিন্ন অংশে এমন আতঙ্কের জন্ম হয়েছে যে, এই ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখলে ভবিষ্যতে ওই টাকা সময় মতো যদি আর পাওয়া না যায়, তখন কী হবে! এবং, এই ধরনের আতঙ্কের জেরেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঊষা৷ কীভাবে? কারণ, ওই আতঙ্কের জেরেও একদিকে যেমন আগের তুলনায় এই ব্যাংকে এখন কম টাকা জমা রাখছেন বহু যৌনকর্মী৷ তেমনই অন্যদিকে, এই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকছে৷ কিন্তু, গচ্ছিত টাকা তুলে নিয়ে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে জমা রাখছেন অনেক যৌনকর্মী৷
অথচ, ঊষার অ্যাকাউন্ট থাকার কারণেই অন্য যে কোনও ব্যাংকেও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন কোনও যৌনকর্মী৷ তা হলে এখন উপায়? দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা, ডাক্তার স্মরজিৎ জানার কথায়, ‘‘নোট বাতিলের প্রভাবে ঊষা ক্ষতিগ্রস্ত৷ এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা চলছে৷’’ কীভাবে? ঊষা মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ম্যানেজার শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঊষার বিজনেস পার্টও রয়েছে৷ স্যানিটারি ন্যাপকিন, কন্ডোম বিক্রি করেও লাভ করছে ঊষা৷ ব্যাংকের এই বিজনেস পার্টের মাধ্যমে আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি৷’’